কর্তব্য ভবনঃ সংকল্প থেকে সিদ্ধির পথে
সকাল সকাল ডেস্ক। – শ্যাম জাজু ভারতের জনমানসে “কর্তব্য”র ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই কর্তব্যের আদর্শে গভীরভাবে নিহিত। ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের রাষ্ট্রের প্রতি নিষ্ঠা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, আচার্য চাণক্যের অনন্য রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা, সম্রাট অশোকের ধর্মপ্রচার, গুপ্ত বংশের জ্ঞান ও ঐশ্বর্যের স্বর্ণযুগ, চোল সাম্রাজ্যের সামুদ্রিক শক্তির কাহিনি এবং ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের লোকহিতকর শাসন—এসবই ভারতীয় পরম্পরার অমর মহিমা। আজ সেই মূল্যবোধ আধুনিক রূপে প্রতিফলিত হচ্ছে ‘‘কর্তব্য ভবন’’ নামের মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর দিল্লিতে ভাড়া করা বিভিন্ন ভবনে চলছিল, যা কেবল এক অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল। কত বছর আর আমরা ভাড়াবাড়ি চালাব? একদিন আমরা স্থির করি—“আমাদের নিজের বাড়ি চাই।” কেন্দ্র সরকারের ক্ষেত্রে সেই পদক্ষেপই হলো ‘‘কর্তব্য ভবন’’। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, সরকার প্রতিবছর লুটিয়েন্স জোন ও দিল্লির আশপাশের এলাকায় ভাড়ার ভবনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে। কেবল ভাড়াতেই ১১০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকা, তার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে আরও ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট হাজার হাজার কোটি টাকা শুধু ভবন ব্যবহারের পেছনেই খরচ হতো। এখন সব অফিস ‘‘কর্তব্য ভবন’’-এ স্থানান্তরিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ০৬ আগস্ট ‘‘কর্তব্য ভবন’’-এর উদ্বোধন করেছেন। এর আগে রাজপথকে ঔপনিবেশিক দাসত্বের প্রতীক মনে করে তার নাম পরিবর্তন করে ‘‘কর্তব্য পথ’’ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, তিনিই এই ‘‘কর্তব্য ভবন’’-এর ভাবনা দিয়েছিলেন এবং তা বাস্তবায়নও করেছেন। ‘‘কর্তব্য ভবন’’র ধারণা শুধু ইট-পাথরের কাঠামো নির্মাণের প্রকল্প নয়, বরং এটি ভারতের আত্মসম্মান ও আত্মনির্ভরতার প্রতীক। যেমন প্রতিটি পরিবার নিজের বাড়িকে স্বপ্ন ও নিরাপত্তার প্রতীক মনে করে, তেমনই রাষ্ট্রেরও নিজস্ব গৃহ থাকা প্রয়োজন। এটাই হবে সেই গৃহ, যেখানে সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত শুধু কাগজে নয়, জনগণের বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে গড়ে উঠবে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও পদক্ষেপটি সুদূরদর্শী, কারণ অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই এর খরচ উঠে আসবে। তবে এর আসল মূল্য সেই মানসিক শক্তিতে, যা এটি আগামী প্রজন্মকে দেবে। এই ভবন আমাদের গণতন্ত্রের আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব রূপ হবে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দ্রুত, স্বচ্ছ ও দৃঢ়ভাবে। বাস্তবিক অর্থে এটি শুধু প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, বরং প্রতিটি ভারতীয়র আত্মমর্যাদা ও সংকল্পের গৃহ হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত, শক্তিশালী যোগাযোগ ও কার্যকর কর্মপদ্ধতি‘‘কর্তব্য ভবন’’ হবে সেই স্থান, যেখানে প্রশাসন একত্রে বসবে, চিন্তা করবে ও কাজ করবে—ফলে যোগাযোগ সহজ হবে এবং দায়বদ্ধতা স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এখন পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর দিল্লির নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিল—নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক, শাস্ত্রী ভবন, নির্মাণ ভবন, শিল্প ভবন, কৃষি ভবন, রেল ভবন ইত্যাদি। এগুলো শুধু আলাদা ঠিকানাই ছিল না, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণও ছিল। এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ছাড়া নীতি প্রণয়ন করতে পারে না। নীতি-প্রক্রিয়ায় সমন্বয় ও চিন্তার আদান-প্রদান অপরিহার্য। এখন সব একত্রিত হওয়ার ফলে এটি কয়েক মিনিটেই সম্ভব হবে। মিটিংয়ের জন্য আসা-যাওয়ার সময় বাঁচবে। শুধু সময়ই নয়, শক্তি, অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদও সাশ্রয় হবে। যেখানে মন্ত্রণালয়গুলি পাশাপাশি অবস্থান করে, সেখানে ‘সমস্যা’র চেয়ে ‘সমাধান’ দ্রুত পাওয়া যায়। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও এটি হবে এক ডিজিটাল–ফার্স্ট অবকাঠামো। সব মন্ত্রণালয়ের নেটওয়ার্কিং, ক্লাউড-ভিত্তিক ফাইল, সুরক্ষিত যোগাযোগ মাধ্যম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা অ্যানালিটিক্স নীতি-প্রণয়নকে দ্রুত করবে। ‘‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’’-র স্লোগান বাস্তবায়িত হবে। নাগরিকরাও এর সুফল পাবেন। যখন সব এক স্থানে হবে, প্রশাসনিক কাঠামো আরও কার্যকরভাবে চলবে। এর প্রত্যক্ষ উপকার হলো—এক আধুনিক সরকারি ভবন, পরিবেশ-সচেতনতা ও ভারতীয় বুদ্ধিমত্তার ছোঁয়া। ভবন, পার্কিং, আধুনিকতা ও পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি‘‘কর্তব্য ভবন’’ শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি ২১শ শতাব্দীতে ভারতের কর্মসংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক। নতুন এই কমপ্লেক্সে প্রায় ১৫০০ চারচাকা ও হাজারো দুইচাকার জন্য বহুস্তরবিশিষ্ট বিশাল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ‘‘কর্তব্য ভবন’’ হবে আধুনিকতার এক আদর্শ। এই ভবন গ্রীন বিল্ডিং মান অনুসারে তৈরি। এখানে সৌরশক্তি ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক আলো ও বাতাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার, জ্বালানি-সাশ্রয়ী যন্ত্র, জল সংরক্ষণের জন্য বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও গ্রে ওয়াটার পুনঃচক্রায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে বিদ্যুতের খরচে বিপুল সাশ্রয় হবে। অনুমান অনুযায়ী, ‘‘কর্তব্য ভবন’’ পুরোপুরি চালু হলে প্রতিবছর প্রায় ২৫–৩০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। কর্তব্য ভবনের উপযোগিতাএলাকাটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, সংসদ ভবন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় দপ্তরের একেবারে কাছাকাছি। এর ফলে প্রশাসনিক কাজের গতি বহুগুণ বেড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, এতদিন মন্ত্রণালয়গুলি দিল্লির নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিল। এর কারণে সিদ্ধান্তে দেরি হতো, ফাইল চলাচলে সময় নষ্ট হতো এবং সমন্বয়ের সমস্যা দেখা দিত। ‘‘কর্তব্য ভবন’’ এই সমস্যার সমাধান করবে। কারণ এই কমপ্লেক্স হবে এক প্রশাসনিক মেরুদণ্ড। এখানে ৩০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় ও তাদের ৫২টি শাখা একসঙ্গে কাজ করবে। এতে প্রশাসনে এক নতুন শক্তি প্রবাহিত হবে। নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত সমন্বয় প্রয়োজন। এখন গুরুত্বপূর্ণ কোনও প্রস্তাব আলোচন, পরামর্শ ও অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় দেরি না হয়ে দ্রুত সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছাকাছি অবস্থানও এক বড় সুবিধা হবে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন, নিয়মিত বৈঠক করবেন এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ সম্ভব হবে। মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সংসদ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বারবার যাতায়াত করতে হতো, এখন আর তা লাগবে না। সংসদ ভবনের নিকটে অবস্থিত ‘‘কর্তব্য ভবন’’ প্রশাসন ও আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সমন্বয় আরও সহজ করবে। সবকিছু এক জায়গায় হওয়া শুধু সুবিধা নয়, বরং এক সুদূরদর্শী ও কৌশলগত প্রয়োজন। ‘‘কর্তব্য ভবন’’ হয়ে উঠছে ভারতের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার কেন্দ্র। ভবিষ্যতের ভারতঃ যুব প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা ভারতআজকের ভারত মহাকাশে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে, ডিজিটাল বিপ্লবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং উদ্যোগের পথ প্রসারিত করছে। এমন ভারতের রাজধানীতে দাঁড়িয়ে থাকা ‘‘কর্তব্য ভবন’’ হবে সেই নতুন ভারতের দৃশ্যমান প্রতীক, যে ভারতের স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেখিয়েছেন। এই ভবনের ভিত্তি টিকে আছে সুদূরদর্শিতা, সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও নৈতিকতার উপর। এ–ই সেই আদর্শ, যা আচার্য চাণক্য ‘‘অর্থশাস্ত্র’’-এ ‘‘সপ্তাঙ্গ রাষ্ট্র’’ তত্ত্বের মাধ্যমে প্রতিপাদন করেছিলেন। সাত অঙ্গ—রাজা, মন্ত্রী, জনপদ, দুর্গ, কোষ, শিক্ষা ও মিত্র—যে কোনও রাষ্ট্রের স্থিতি ও শক্তির ভিত্তি হিসাবে গণ্য হয়েছে। ‘‘কর্তব্য ভবন’’ এই সব উপাদানের আধুনিক, সমন্বিত ও শক্তিশালী রূপ। মোদিজির এই স্বপ্ন হলো, শাসন যেন কেবল দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং দায়িত্ব, স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার এক জীবন্ত সংস্কৃতি তৈরি করে। ‘‘কর্তব্য ভবন’’ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
মজবুত ভারত, বুলন্দ ইরাদে
সকাল সকাল ডেস্ক। -ঋতুপর্ণ দেবে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে টানা ১২তম বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাধীনতা দিবসের এবারের ভাষণ কিছুটা আলাদা এবং নানা ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল। তাঁর ১০৩ মিনিটের বক্তব্য কেবলমাত্র এতদিনের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘই নয়, বরং কঠিন ও স্পষ্ট সংকল্প প্রদর্শনকারীও বটে। এটি কূটনীতির দিক থেকেও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। যেখানে শুরুতেই অনুচ্ছেদ ৩৭০ অপসারণ করে এক দেশ, এক সংবিধানের কথা বলেন। সেখানে অপারেশন সিন্দূরের প্রসঙ্গ তুলে সেনাকে উন্মুক্ত অনুমতি দেওয়ার সত্যও সামনে রাখেন। আসলে, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বহু দিক থেকেই ভিন্ন, কঠিন এবং বিশ্বের জন্য কূটনৈতিক বার্তার মতো ছিল। পাশাপাশি দেশের ভেতরেও ঘটতে থাকা অগ্রহণযোগ্য ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে সতর্কবার্তাও ছিল। এর বাইরে দেশের অগ্রগতি, যুবকদের প্রেরণা, সাফল্য এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ভারতের অবদানকেও কেন্দ্র করে ছিল। প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এমন কোনও বিষয়ই বাদ রাখেননি, যা জরুরি ছিল না। ইশারায় যেখানে আমেরিকা ও চীনকে তার আসল অবস্থান মনে করিয়ে দেন, সেখানেই পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে তীব্র আক্রমণ করেন। প্রথমে জানা যাক তিনি কী কী বলেছেন। পাহালগাঁও হামলার প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে একহাতে নিয়ে তাঁদের সন্ত্রাসী হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করার কথা বলে পাকিস্তানের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। দীর্ঘদিনের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের সামনে নতি স্বীকার করবেন না এবং সেনার শর্তে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার কথাও বলেন। পুরনো সিন্ধু জল চুক্তিকে অন্যায্য বলে উল্লেখ করে প্রশ্ন তোলেন, ভারতের নদী কি শত্রুর খেত সিঞ্চন করবে আর দেশের কৃষকের জমি তৃষ্ণার্ত থাকবে? সিন্ধু চুক্তির ওই রূপ আর মেনে নেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট জানান। ২১শ শতক প্রযুক্তিনির্ভর শতক। ৫০–৬০ বছর আগে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে চিন্তা হলেও ফাইল সেখানেই আটকে যায়। সেমিকন্ডাক্টরের চিন্তার ভ্রূণহত্যা হয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক দেশ সেমিকন্ডাক্টরে দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বকে তাদের শক্তি দেখিয়েছে। মিশন মোডে এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও ৬টি ভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনার মধ্যে চারটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান। চলতি বছরের শেষে মেড ইন ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারতেই তৈরি চিপ বাজারে আসা এক বিশাল সাফল্য হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও অনেক পরিকল্পনা ও সাফল্যের কথাও তোলেন। ১১ বছরে সোলার এনার্জির ব্যবহার ৩০ গুণ বৃদ্ধি, নতুন নতুন ড্যাম তৈরি করে জল শক্তির প্রসার ঘটানো, ক্লিন এনার্জির দিকে অগ্রসর হওয়া, ১০টি নতুন নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর দ্রুত কাজ করছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গঠনের লক্ষ্য যাতে স্বাধীনতার ১০০ বছরে ভারতের পারমাণবিক শক্তি ক্ষমতা ১০ গুণেরও বেশি হয়। তিনি বলেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং মোকাবিলায় নির্ধারিত সময় ২০৩০–এর আগে ৫ বছরেই ৫০ শতাংশ ক্লিন এনার্জির লক্ষ্য অর্জন করা আমাদের প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতার প্রমাণ। ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিশন চালু করে ১২০০–রও বেশি স্থানে অনুসন্ধান অভিযানের মাধ্যমে আমরা ক্রিটিক্যাল মিনারেলেও আত্মনির্ভরতার দিকে এগোচ্ছি, যা বিরাট অর্জন। যুব সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের নিজস্ব মেড ইন ইন্ডিয়া ফাইটার জেটের জন্য জেট ইঞ্জিনও কি আমাদের হওয়া উচিত নয়? আমরা ‘ফার্মা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’। এখন সময় এসেছে গবেষণা ও উন্নয়নে আরও শক্তি লাগানোর। আমাদের নিজস্ব পেটেন্ট হওয়া উচিত। মানবকল্যাণে সস্তা, সবচেয়ে কার্যকর ও নতুন ওষুধে গবেষণা হওয়া চাই। সঙ্কটকালে যাতে কোনও সাইড ইফেক্ট ছাড়াই জনকল্যাণে কাজে লাগে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আহ্বান করেন যে এটি আইটির যুগ, ডেটাই শক্তি। সময়ের দাবি নয় কি যে অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা, ডিপ টেক থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পর্যন্ত সবকিছু আমাদের নিজস্ব হোক? নিজেদের সামর্থ্য ও শক্তিকে বিশ্বের সামনে পরিচিত করিয়ে বলেন, আমাদের ইউপিআই বিশ্বকে বিস্মিত করছে। রিয়েল টাইম ট্রানজ্যাকশনের ৫০ শতাংশ একা ভারতই ইউপিআইয়ের মাধ্যমে করছে। ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ড, সোশ্যাল মিডিয়া—এতসব প্ল্যাটফর্ম কেন আমাদের নিজস্ব হবে না? কেন ভারতের অর্থ বাইরে যাবে? আমি যুবকদের সামর্থ্যের উপর আস্থা রাখি। প্রধানমন্ত্রী ইভি ব্যাটারি, সোলার প্যানেল, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, মানসম্মত পণ্যের পরিচিতির পাশাপাশি নেক্সট জেনারেশন রিফর্মসের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা বলেন, যাতে বর্তমান আইন, নীতি, প্রথা ২১শ শতক ও বৈশ্বিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খায় এবং ২০৪৭ সালে ভারতকে উন্নত দেশ করে তুলতে পারে। নেক্সট জেনারেশন জিএসটি সংস্কারকে দীপাবলির উপহার বলে উল্লেখ করে জানান, মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসে আরোপিত ভারী কর অনেকটা কমে যাবে, এমএসএমই, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা লাভবান হবে এবং দৈনন্দিন পণ্য সস্তা হয়ে অর্থনীতিকে নতুন বল দেবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, ভেবেচিন্তে সাজানো চক্রান্তের মাধ্যমে দেশের ডেমোগ্রাফি বদলকে নতুন সঙ্কট বলে উল্লেখ করেন। অনুপ্রবেশকারীরা দেশের যুবকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, বোন–বেটিদের টার্গেট করছে। এটা সহ্য করা হবে না। আমাদের পূর্বপুরুষরা ত্যাগ ও আত্মবলিদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। একটি হাই পাওয়ার ডেমোগ্রাফি মিশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা এমন ভয়ঙ্কর সঙ্কট মোকাবিলায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করবে। আমরা সে পথে এগোচ্ছি। এবারের ভাষণ থেকে এতটুকু স্পষ্ট হয়ে গেল যে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেয়ে বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলার সংকল্প দেশবাসীর সামনে রেখেছেন। ব্ল্যাকমেল সহ্য নয়, অপারেশন সিন্দূরের উল্লেখ, স্বদেশীকে ‘মজবুরি নয়, মজবুতি’ হিসেবে তুলে ধরা—এর সঙ্গে পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে এবং আমেরিকাকে ইশারায় সতর্কও করেছেন। প্রথমবার লালকেল্লা থেকে জাতীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ১০০ বছরের জাতিসেবা উল্লেখ করা এবং মা ভারতীর কল্যাণের লক্ষ্যে সেবা, সমর্পণ, সংগঠন ও অতুলনীয় শৃঙ্খলার প্রসঙ্গ তুলে আরএসএসকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও বলে আখ্যা দেওয়া এবং জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ আনার রাজনৈতিক তাৎপর্যও বেরোবে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী ১২তম বার সবচেয়ে দীর্ঘ, ১০৩ মিনিট বক্তব্য রেখে বিশ্বকে নিজের সংকল্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখন সময় পক্ষ–বিপক্ষের, যারা তাঁর ভাষণের নিজ নিজ মতানুযায়ী নানা ব্যাখ্যা ও অর্থ বার করবে।
আগস্ট-ভোটারবান্ধবপ্রক্রিয়া, নির্বাচনকমিশনকেবদনামকরাঅন্যায়
সকাল সকাল ডেস্ক। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর পুনরীক্ষণ (এসআইআর) সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে একে ভোটারবান্ধব প্রক্রিয়া আখ্যা দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি সন্তোষজনক মন্তব্য। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই মামলা আর কতদিন ঝুলে থাকবে? যত দ্রুত এর নিষ্পত্তি হবে ততই উত্তম, কারণ কিছু বিরোধী দল এ নিয়ে সস্তার রাজনীতি করতে বদ্ধপরিকর। তারা এমন প্রচার চালাচ্ছে যেন এই পুনরীক্ষণ প্রক্রিয়ার আড়ালে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করেই কিছু বিশেষ ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইছে, যাতে বিজেপি নির্বাচনী সুবিধা পায়। এই অভিযোগকে জোরদার করতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী পর্যন্ত বলে ফেলেছেন যে গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—যদি সত্যিই ভোট চুরি হয়ে থাকে তবে কংগ্রেস কীভাবে ৯৯টি আসনে জিতল? আর বিজেপি-ই বা কেন ২৪০-এ সীমাবদ্ধ রইল? বাস্তবতা হলো, ওই ৯৯টি আসন পাওয়ার কারণেই রাহুল গান্ধী আজ বিরোধী দলনেতা হতে পেরেছেন। এই প্রেক্ষাপট তিনি উপেক্ষা করছেন। এটিও বিস্ময়কর যে বিহারের ভোটার তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশের ১৩ দিন পরও কোনো রাজনৈতিক দল লিখিত আপত্তি দাখিল করেনি। বরং তারা কমিশনের ছোটখাটো ভুলকে অতিরঞ্জিত করে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। এটিই “তিলকে তাল” বানানো ছাড়া আর কিছু নয়। দেশে এমন কোনো প্রক্রিয়া নেই যেখানে একেবারেই গলদ থাকে না। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালে যখন আধার চালু হয়েছিল তখন কি সব কিছু নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল? আবার ফটো-ভোটার আইডি চালুর সময় কি কমিশনের একটিও ভুল হয়নি? ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি বা যাচাইয়ের সময় কোনো ত্রুটি হওয়া উচিত নয়, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কংগ্রেস কি দাবি করতে পারে যে তাদের আমলে কমিশনের প্রতিটি কাজ ভুলত্রুটিমুক্ত ছিল? উদাহরণস্বরূপ, বিহারের এক মহিলার ভোটার আইডিতে বয়স ৩৫-এর জায়গায় ১২৪ লেখা পড়েছে। এটিকে বড় করে দেখানো হলেও এমন বিচ্ছিন্ন ভুল যে কোনো রাজ্যে ঘটতে পারে। প্রকৃত দায়িত্ব বিরোধীদেরই নেওয়া উচিত—কমিশনের প্রক্রিয়াকে আরও সঠিক করতে সহযোগিতা করা, নিজেদের আপত্তি আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া। কিন্তু তারা তা এড়িয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আর রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে আসলে তারা ভোটারদের স্বার্থকেই উপেক্ষা করছে। সুপ্রিম কোর্ট যেমন বলেছে, এই পুনরীক্ষণ প্রক্রিয়া ভোটারবান্ধব। তাই বিরোধীদের উচিত একে বাধাগ্রস্ত না করে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। কমিশনের ছোটখাটো ত্রুটি নিয়ে অযথা হইচই না করে, ভোটার তালিকাকে যতটা সম্ভব নিখুঁত করার কাজে সক্রিয় সহযোগিতা করাই গণতন্ত্রের স্বার্থে শ্রেয়।
দক্ষিণ চীন সাগরের ঢেউয়ে ভারতের বাড়তে থাকা প্রভাব
দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তাল জলে ভারতের পতাকা এখন কেবল সমুদ্রের হাওয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোড়নেও উড়তে শুরু করেছে। বৃটেনে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী টেডোরো লক্সিন জুনিয়র সম্প্রতি ভারত-ফিলিপাইনসের প্রথম যৌথ নৌসেনা মহড়ার পর যে খোলামেলা ভঙ্গিতে ভারতীয় নৌসেনার প্রশংসা করেছেন, তা শুধু একটি কূটনৈতিক উক্তি নয়। এটি সেই বদলে যাওয়া সামরিক সমীকরণের ইঙ্গিত, যেখানে ভারত এখন এক সাহসী সমুদ্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। লক্সিনের এই মন্তব্য যে, “ভারতীয় নৌসেনা একমাত্র সেই নৌসেনা যে যেখানে যেতে চায়, সেখানে যায়” সরাসরি সেই আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক, যা ভারত গত এক দশকে “ইন্দো-প্রশান্ত” অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে যখন ফিলিপাইনের জলসীমায় উত্তেজনা চরমে। সম্প্রতি স্কারবোরো শোলের কাছে ফিলিপাইনের উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক নৌকাকে হয়রানি করতে গিয়ে চীনের নৌসেনা ও উপকূলরক্ষীর জাহাজ নিজেরাই একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। এই ঘটনা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বাড়তে থাকা আগ্রাসন ও তার ফলাফলের স্পষ্ট উদাহরণ। ফিলিপাইনের বিআরপি সুলুয়ান জাহাজ সেখানে ছিল জেলেদের সহায়তা ও সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য, কিন্তু চীনের “সামরিক জবরদস্তি” নীতির কারণে সেখানে চীনা জাহাজের আসা-যাওয়া নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও ফিলিপাইনের যৌথ নৌমহড়া এক সাহসী বার্তা নিয়ে এসেছে যে দক্ষিণ চীন সাগর আর কেবল চীন ও তার দাবির খেলার মাঠ হয়ে থাকবে না। দক্ষিণ চীন সাগর, এশিয়ার সেই সামরিক ফ্রন্ট যেখানে ভূগোল, সম্পদ ও শক্তিরাজনীতি—এই তিনেরই মিলন ঘটে। এখানে প্রতি বছর প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক মালামাল যাতায়াত করে। শক্তির বিশাল ভাণ্ডার, সমৃদ্ধ মৎস্যসম্পদ এবং কৌশলগত সমুদ্রপথ একে বিশ্বশক্তির ভারসাম্যের কেন্দ্র বানিয়েছে। চীন “নয়-ড্যাশ রেখা”র নামে গোটা অঞ্চলের উপর ঐতিহাসিক অধিকার দাবি করে, অথচ ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও তাইওয়ানও তাদের নিজ নিজ অংশের দাবি করে। আমেরিকা ও তার মিত্ররা এই অঞ্চলে “নৌপরিবহণের স্বাধীনতা”র নামে নৌগশ্ত চালালেও তারা চীনের সংবেদনশীল এলাকায় সরাসরি সংঘাতে যেতে এড়িয়ে চলে। এর বিপরীতে, ভারত গত কয়েক বছরে তার যুদ্ধজাহাজ ও সরবরাহ জাহাজের মাধ্যমে বারবার প্রমাণ করেছে যে, সে যেকোনো সমুদ্রসীমায়, তা চীনের দাবির ভেতরেই হোক না কেন, তার মিত্র দেশের পাশে দাঁড়াবে। ভারত ও ফিলিপাইনের এই প্রথম নৌমহড়া কেবল প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সূচনা নয়, বরং এটি এক কৌশলগত “ঘোষণা”। ভারতের “পূর্বমুখী নীতি” এখন “দৃঢ় পূর্বমুখী নীতি”য় পরিণত হচ্ছে। এই পরিবর্তন কেবল নীতিগত রদবদল নয়, বরং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার ফল। চীনের আগ্রাসী মনোভাব আর আমেরিকার দ্বিধার মাঝখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এমন এক অংশীদার খুঁজছে, যে শুধু পাশে দাঁড়াবে না, প্রয়োজনে মাঠেও নামবে। ভারত এই ভূমিকায় পুরোপুরি মানানসই—তার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা দিয়ে। লক্সিনের মন্তব্যে পশ্চিমা দেশগুলোর নৌসেনাদের দিকেও বিদ্রূপ ছিল। “খোজা” শব্দটি তিনি ব্যবহার করেছেন কেবল রসিকতার জন্য নয়, বরং দেখানোর জন্য যে পশ্চিমা শক্তিগুলো আওয়াজ তো তোলে, কিন্তু বাস্তবে চীনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করে। এর বিপরীতে, ভারত কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট ছাড়াই সেখানে পৌঁছে যায়, যেখানে তার বন্ধুর প্রয়োজন হয়। এ কারণেই লক্সিন খোলাখুলিভাবে বলেছেন, ফিলিপাইনের সাহস তার শক্তি, কিন্তু এই গশ্তে যোগ দেওয়ার সাহস কেবল ভারতীয়দের আছে। ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, ভারত-ফিলিপাইনস সম্পর্ক কেবল আজকের কৌশলের ফল নয়। দুই দেশ ১৯৫০ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। তখন থেকেই সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক ক্রমশ এগিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ফিলিপাইনস ভারত থেকে ব্রহ্মোস অতিস্বনক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে, যা চীনের সামুদ্রিক ঘাঁটিতে দ্রুত ও নিখুঁত আঘাত হানতে সক্ষম। এই চুক্তি কেবল সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর নয়, বরং দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্বেরও প্রমাণ। লক্সিনের “উউন্ডেড নি হত্যাকাণ্ড”র প্রসঙ্গও গভীর বার্তা বহন করে। এটি ১৮৯০ সালের সেই ঘটনা, যখন আমেরিকান সেনারা দক্ষিণ ডাকোটায় লাকোটা সিউক্স জনগোষ্ঠীর ১৫০ থেকে ৩০০ মানুষকে হত্যা করেছিল। এদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিল। লক্সিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আমেরিকার ইতিহাস তার সহযোগী ও আদিবাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতায় ভরা এবং আজও তার পররাষ্ট্রনীতিতে সেই প্রবণতা দেখা যায়। এই মন্তব্য পরোক্ষভাবে জানিয়ে দেয় যে ফিলিপাইনসের মতো দেশগুলো আমেরিকার উপর অন্ধভাবে নির্ভর করতে পারে না এবং ভারতের মতো দেশ তাদের জন্য অনেক বেশি বিশ্বস্ত অংশীদার হতে পারে। ভারতের সামুদ্রিক কৌশল এখন ভারত মহাসাগর ছাড়িয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। এটি কেবল সামরিক উপস্থিতি নয়, বরং এক “নিরাপত্তা প্রদানকারী নেটওয়ার্ক”র ভূমিকা। এর মানে ভারত শুধু নিজের স্বার্থ রক্ষা করছে না, বরং মিত্র দেশগুলোর সামুদ্রিক নিরাপত্তারও দায়িত্ব নিচ্ছে। বলতে হবে, এই ভূমিকা পালন করা সহজ নয়—এতে নৌসেনার সক্ষমতা, অর্থনৈতিক সম্পদ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা—এই তিনেরই প্রয়োজন হয়। গত এক দশকে ভারত এই তিন ক্ষেত্রেই তার প্রস্তুতি প্রমাণ করেছে। আসলে টেডোরো লক্সিনের এই মন্তব্য সেই বিশ্বাসের প্রকাশ, যা ভারত তার আচরণ ও নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতের উপস্থিতি এখন আর কেবল প্রতীকী নয়, বরং চূড়ান্ত। তার এই উপস্থিতি আগামী দিনে ফিলিপাইনসই নয়, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে। পশ্চিমা শক্তিগুলোর দ্বিধার মাঝখানে ভারতের এই আত্মবিশ্বাস আগামী বছরগুলোতে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের শক্তিসাম্যকে নতুন দিশা দিতে পারে। যেখানে পশ্চিমা দেশগুলো কৌশলগত দলিল ও বক্তব্যে আটকে আছে, সেখানে ভারত ঢেউয়ের উপর নিজের পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছে—কখনো মিত্র দেশের তটে, তো কখনো বিতর্কিত জলসীমার মাঝখানে। আজ এটি শুধু এক নৌসেনার গল্প নয়, বরং এমন এক দেশের কাহিনী, যে এখন বিশ্বমঞ্চে নিজের জায়গা নিজেই নির্ধারণ করছে। আর এ কারণেই দক্ষিণ চীন সাগরের ঢেউয়ে আজ ভারতীয় নৌসেনার নাম সাহস ও বিশ্বাসের প্রতিশব্দ হিসেবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই দিকটিতে ভারতকে যে পদক্ষেপ নিতে হবে, তার মধ্যে প্রধান হবে—ভারত-ফিলিপাইনস সহযোগিতার অন্তর্গত নিয়মিত যৌথ গশ্ত, সামুদ্রিক নজরদারি ভাগাভাগি করা, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সরবরাহ। এই তিনটি পদক্ষেপই দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতের উপস্থিতিকে স্থায়ী করতে পারে। এর বাইরে, আসিয়ান মঞ্চে এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর উদ্যোগে দুই দেশ একসঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো মজবুত করতে পারে। চীনের জন্য এটি এক স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ হবে। ভাল দিক হলো, এই চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন এবং “নৌপরিবহণের স্বাধীনতা”র নীতির উপর ভিত্তি করে হবে, যা ভারতকে বৈধতা ও নৈতিক উচ্চতা দুটোই প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা : আত্মনির্ভর, শক্তিশালী, সুযোগে ভরপুর ভারত গড়ার সংকল্প
ভারত আজ সেই ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখান থেকে তার দিকনির্দেশ সরাসরি বৈশ্বিক মহাশক্তি হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে গত পঁচাত্তর বছরে দেশ নানান উত্থান-পতন দেখেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে ভারত তার অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রযুক্তিগত ও সামাজিক সক্ষমতাকে পরিপক্ব করেছে, তা যে কোনও জাতির জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ। স্বাধীনতা দিবসের উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণাটি এই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ কড়ি। প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা কেবল একটি নীতিগত উদ্যোগ নয়, বরং এটি সেই বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গির অংশ যার অধীনে ভারতকে আত্মনির্ভর, শক্তিশালী এবং সুযোগে পরিপূর্ণ সমাজ হিসেবে গড়ার সংকল্প নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা প্রতিফলিত করে সেই বিশ্বাস যে, ভারতের ভবিষ্যৎ নিহিত আছে তার যুবসমাজের মধ্যে। এই বিশ্বাসই আমাদের সেই লক্ষ্য পর্যন্ত নিয়ে যাবে যেখানে ভারত শুধু তার নাগরিকদের জন্য সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে না, বরং বিশ্বকেও শান্তি, অগ্রগতি ও মানবিক মূল্যের দিশা দেখাবে। এই যোজনা ১ লক্ষ কোটি টাকার ব্যয়ে কার্যকর করা হচ্ছে এবং এর আওতায় আগামী দুই বছরে ৩.৫ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম দর্শনে এই ঘোষণা হয়তো একটি সরকারি কর্মসূচি মনে হতে পারে, কিন্তু গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায় যে এটি ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি, তার সামাজিক কাঠামো এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কারণ, কোনও দেশের মহাশক্তি হওয়ার পথ তার যুবসমাজের হাত দিয়েই অতিক্রান্ত হয়। যুবকদের জন্যও এটি একটি সুযোগ, যেখানে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার সুরক্ষা-কবচ দেওয়া হচ্ছে। তাদের শ্রম যদি যথাযথ মর্যাদা পায়, তবে কেবল তাদের ব্যক্তিগত সমৃদ্ধিই নয়, বরং জাতির সমষ্টিগত উন্নয়নও নিশ্চিত হয়। আজ ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং নীতিগত পূর্বাভাস অনুযায়ী খুব শিগগিরই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। এটি কেবল পরিসংখ্যানের খেলা নয়, বরং এই সত্যের প্রমাণ যে ভারতের উৎপাদন, তার রপ্তানি, তার সেবা-ক্ষমতা এবং তার অভ্যন্তরীণ বাজার অভূতপূর্ব সম্প্রসারণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এমন সময়ে যখন পশ্চিমা দেশগুলির অর্থনীতি মন্দার সঙ্গে লড়ছে, ভারতের প্রবৃদ্ধি হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানও স্বীকার করে নিয়েছে যে, বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ইঞ্জিন আজ ভারত। এর পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এবং বৈশ্বিক ভাবমূর্তিও আজ এমন যে, তা আমাদের মহাশক্তি হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করছে। আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের মতো উন্নত দেশ ভারতকে তাদের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখছে। ব্রিকস ও জি-২০–এর মতো মঞ্চে ভারতের নেতৃত্বদায়ক ভূমিকা স্পষ্ট। প্রতিরক্ষা উৎপাদন, মহাকাশ প্রযুক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সবুজ জ্বালানির মতো ক্ষেত্রে ভারত যে অগ্রগতি করেছে, তা আগামী বছরগুলোতে বিশ্বকে পথ দেখাবে। এমন পরিস্থিতিতে যদি দেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামো, বিশেষ করে কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তার কাঠামো আরও শক্তিশালী হয়, তবে ভারতের জন্য বৈশ্বিক মহাশক্তি হওয়ার পথ আরও সহজ হবে। বর্তমানে যা প্রতীয়মান হচ্ছে, তার আলোকে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তার মধ্যে এই বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা ভারতের উন্নয়নকে সমাজের আরও গভীরে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হবে। এর ‘এ’ অংশ সরাসরি সেই যুবকদের লক্ষ্য করছে, যারা প্রথমবার কর্মজীবনে প্রবেশ করছে। যারা সদ্য পড়াশোনা শেষ করে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করছে, তাদের দু’কিস্তিতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রोत्सাহনমূলক অনুদান দেওয়া হবে। এটি শুধু তাদের আর্থিক চাপ লাঘব করবে না, বরং তাদের আর্থিক সাক্ষরতার গুরুত্ব সম্পর্কেও সচেতন করবে। এই দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের দেশে অনেক যুবক চাকরি পেলেও সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে না। এই অনুদানের একটি অংশ সঞ্চয়ী হিসাবে জমা রাখা বাধ্যতামূলক হবে, যাতে তাদের মধ্যে আর্থিক শৃঙ্খলার অভ্যাস গড়ে ওঠে। যোজনার দ্বিতীয় অংশটি নিয়োগকারীদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য। যতদিন শিল্প ও পরিষেবা খাত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না, ততদিন যুবকদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। সরকার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, নিয়োগকারীদের ওপর চাপ কমাতে তারা প্রস্তুত। যদি কোনও কোম্পানি নতুন কর্মী নিয়োগ করে এবং তার বেতন এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়, তবে সরকার দুই বছর ধরে প্রতি কর্মীর জন্য মাসিক তিন হাজার টাকা ভর্তুকি দেবে। উৎপাদন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই প্রণোদনা চার বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে ভারত কেবল পরিষেবা খাতে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানে গতি এনে উৎপাদন খাতকেও অর্থনীতির মেরুদণ্ড বানাতে চায়। আজ দেখা যাচ্ছে যে কেন্দ্র সরকারের বেশিরভাগ বড় পরিকল্পনাই তৃণমূল স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। জনধন যোজনা, উজ্ব্বলা, আয়ুষ্মান ভারত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এবং উৎপাদন-সংক্রান্ত প্রণোদনা (পিএলআই) তার উদাহরণ। এই পরিকল্পনাগুলো সমাজ ও অর্থনীতিতে রূপান্তর এনেছে। তাই বিকশিত ভারত রোজগার যোজনার ক্ষেত্রেও আশা করা হচ্ছে যে এটি শুধুই ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং যুবকদের বাস্তব সুযোগ করে দেবে। তাই বলা ভুল হবে না যে এই যোজনার প্রভাব ভারতের সামাজিক কাঠামোর ওপরও পড়বে। প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি সত্য যে আমাদের দেশে আজও অসংগঠিত খাতের অংশ অত্যন্ত বড়। বিপুল সংখ্যক মানুষ কোনও সামাজিক নিরাপত্তা ছাড়াই অস্থায়ী কাজে নিযুক্ত। কিন্তু এই যোজনা সরাসরি ইপিএফও–তে নিবন্ধিত কর্মী এবং প্যান–লিঙ্কড হিসাবযুক্ত নিয়োগকারীদের লক্ষ্য করছে। এর মানে হলো, কোটি কোটি যুবক ও লক্ষ লক্ষ প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ হবে। আর যখন কর্মশক্তি আনুষ্ঠানিক হয়, তখন তারা স্বাস্থ্যবিমা, পেনশন, ভবিষ্যৎনিধি ও অন্যান্য সুবিধা পায়। এতে সমাজে বৈষম্য কমে এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিস্তার ঘটে। ভারতের মহাশক্তি হওয়ার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার জনসংখ্যা-গঠন। আজ ভারতের অর্ধেকের বেশি মানুষ ৩০ বছরের কম বয়সী। এই ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ আমাদের জন্য যেমন সুযোগ, তেমনি চ্যালেঞ্জও। যদি এই যুবকদের যথাযথ শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান দেওয়া যায়, তবে তারা শুধু ভারতের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, বরং বিশ্বজুড়েও ভারতীয় দক্ষতার ছাপ ফেলবে। কিন্তু যদি এই যুবকরা বেকারত্ব ও হতাশার শিকার হয়, তবে সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি হতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা সময়োপযোগী এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ। এই যোজনা ভারতের সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তব রূপ দেয়, যেখানে প্রতিটি যুবক কেবল চাকরিই নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সুযোগ পায়।
দিশোম গুরু শিবু সোরেনের বিদায় — এক সংগ্রামী অধ্যায়ের অবসান
সকাল সকাল ডেস্ক। উজ্জ্বল কুমার দত্ত(শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক)কুমারডুবি, ঝাড়খন্ড। তাঁর পুত্র হেমন্ত সোরেন বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। শিবু সোরেনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে হেমন্ত তাঁর বাবার আদর্শকে সামনে রেখে রাজ্য পরিচালনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দিশোম গুরু শিবু সোরেনের মতো ব্যক্তিত্বের বিকল্প কোনোদিনই হয় না। শিবু সোরেন ছিলেন এক চলমান প্রতীক, যিনি শুধুমাত্র মাটি, খনিজ সম্পদ কিংবা ভোটের রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি আদিবাসী সমাজের আত্মবিশ্বাসের প্রেরণা ছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে তাঁর মৃত্যু কি শুধুই এক ব্যক্তির মৃত্যু, নাকি একটি আদিবাসী জাতিসত্তার রাজনীতির এক অধ্যায়ের সমাপ্তি? উত্তর হয়তো সময় দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত বলা যায়—শিবু সোরেন ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন; মাটির ঘ্রাণে, লড়াইয়ের গর্জনে, আর এক জাতির অস্তিত্বের মূলমন্ত্রে।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পথ
২০২৩ সালে পাশ হওয়া নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম (সংবিধানের ১০৬তম সংশোধনী) দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর একটি ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা। এই অধিনিয়ম লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।
শব্দ দানব: এক মারাত্মক শত্রু
ক’দিন আগেও যেখানে মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে, সেখানে এখন ঘুম ভাঙে শব্দ-সন্ত্রাসে, বাস, মোটর গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশার তীব্র, হর্ণে। পিলে চমকানো ধাতব শব্দে চমকে ওঠে আজকাল শহরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ। শুরু হয় শব্দ কলুষিত প্রতিবেশের এক একটি দিন। সারাদিন শব্দ দানবের নিপীড়ন শরীরের সমস্ত স্নায়ু আচ্ছন্ন করে রাখে। এরপর আছে পাড়ায় পাড়ায়, উপলক্ষ বা অনুপলক্ষ ছাড়াই মাইকের জ্বালাতন, ফেরিওয়ালার চিৎকার
ভারতে দরিদ্রদের সংখ্যা হ্রাসের অর্থ
যেকোনো দেশের জন্য জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হওয়ার অর্থ হলো, তার দ্বারা এমন সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা যাতে সেখানে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে যেকোনো ধরনের বৈষম্য ও অব্যবস্থা দূর হতে পারে।
বিরসা মুন্ডা- এক মৃত্যুহীন প্রাণ
কলমে:- উজ্জ্বল কুমার দত্ত।কুমারডুবি (ঝাড়খন্ড)আজ ভারতীয় সমাজবাদের (socialism) আদর্শ চরিত্র বিরসা মুন্ডা ভগবানের তিরোধান দিবস। তিনি জনজাতি সমাজকে সঙ্ঘবদ্ধ করে উলগুলান করেছিলেন। উলগুলান অর্থাৎ গোলমাল সৃষ্টি করা; আন্দোলনের আরেক দেশজ নাম। তিনি এক মহান সংস্কৃতিবান সমাজ সংস্কারক (social reformer) ছিলেন। তিনি সংগীতবিসারদও ছিলেন। তিনি শুকনো লাউ এর খোলা ব্যবহার করে এক বিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছিলেন। যে বাদ্যযন্ত্রটি বর্তমানেও বহুল প্রচলিত। এই বাদ্যযন্ত্রটি বাজিয়ে তিনি আত্মিক সুখ অনুভব করতেন এবং তিনি দলিত, পীড়িত সমাজকে সংগঠিত করে সমাজের উন্নতিকল্পে কাজ করে যেতেন যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বংশীর (বাঁশি) সুরে প্রত্যেককে আপন করতে পারতেন। শ্রীকৃষ্ণের সেইরূপ আমরা দেখতে পাই বিরসা মুন্ডার মধ্যে। শুকনো লাউ দ্বারা নির্মিত এই বাদ্যযন্ত্র ভারতীয় সংগীত জগতে বনাঞ্চল থেকে বলিউড পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বস্তুতপক্ষে বিরসা মুন্ডার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনজাতি সমাজকে খ্রিস্টান মিশনারীদের হাত থেকে রক্ষা করা, ধর্মান্তরন ও অত্যাচার থেকে রক্ষা করা, সমাজে ব্যাপ্ত নীতিহীনতাকে সমাপ্ত করা এবং শোষক বর্গের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করা। ভগবান বিরসা কেবল জনজাতিয় সমাজেরই রক্ষাকর্তা ছিলেন না; তিনি ছিলেন সমগ্র গ্রাম্য ভারতীয় সমাজের নায়ক ও পথপ্রদর্শক। ভারতীয় সমাজের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিভাজ্য অংশ আমাদের এই জনজাতি সমাজ। তারাই প্রকৃত সমাজবাদের দীক্ষিত। (মতামত ব্যক্তিগত)