সকাল সকাল ডেস্ক।
ড. আশীষ বশিষ্ঠ
পহেলগাম সন্ত্রাসী ঘটনার পর ভারতের বীর জওয়ানরা অপারেশন সিন্দুরের অধীনে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো যেভাবে ধ্বংস করেছে, বিশ্বজুড়ে তার দ্বিতীয় উদাহরণ সহজে মনে আসে না। সন্ত্রাসী আস্তানা ধ্বংস এবং শত শত সন্ত্রাসীর লাশ একসাথে ওঠার পর ক্ষিপ্ত পাকিস্তান ভারতীয় শহর, সাধারণ নাগরিক, উপাসনালয় এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করে যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে, সে সম্পর্কে আর কীই বা বলা যায়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হামলার জবাবে যখন বীর ভারতীয় সৈন্যরা তাদের অস্ত্রের মুখ পাকিস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দিল, তখন মাত্র তিন দিনের মধ্যে পাকিস্তান দয়ার ভিক্ষা চাইতে শুরু করল। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৈন্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভারতীয় সৈন্যরা যেভাবে পাকিস্তানের হামলাগুলোকে দক্ষতার সাথে ব্যর্থ করেছে এবং তার সামরিক ঘাঁটিগুলোতে নির্ভুল নিশানা লাগিয়েছে, তাতে বিশ্বের সমস্ত ছোট-বড় শক্তি হতবাক এবং সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছে। উভয় দেশের ডিজিএমও-র আলোচনার পর মৌখিক যুদ্ধবিরতি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রবৃত্তি, চরিত্র এবং ইতিহাসের আলোকে একটি কথা স্পষ্টভাবে জেনে নিন, বা গাঁট বেঁধে নিন, আজ না হোক কাল যুদ্ধ তো হবেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার 22 মিনিটের সঠিক, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সারগর্ভ ভাষণে পাকিস্তানের দুষ্ট আচরণ এবং দুষ্প্রবৃত্তিকে সমগ্র বিশ্বের সামনে উন্মোচন করতে কোনো কসুর বাকি রাখেননি। অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে সাহসী ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানকে যত গভীর ক্ষত দিয়েছে, তা তার আগত প্রজন্মও ভুলবে না। 1948, 1965, 1971 এবং 1999 সালে পাকিস্তানের সাথে হওয়া যুদ্ধে ভারত পাকিস্তানকে এত খারাপভাবে মারেনি, যতটা অপারেশন সিন্দুরে তার ক্ষতি হয়েছে। যত গভীর ক্ষত তাকে এবার বীর ভারতীয় সৈন্যরা দিয়েছে, তা যদি পূর্বে দেওয়া হতো তাহলে এই দিন দেখার প্রয়োজন হতো না। একটি দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাবে পাকিস্তান প্রতিবার বেঁচে গেছে। এবং আমাদের সৈন্যরা চাইলেও পাকিস্তানকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার যে দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দিয়েছে, তার যত প্রশংসা করা হোক তা কমই।
সাহসী ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলা থেকে হওয়া প্রত্যক্ষ এবং সম্ভাব্য ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান তার প্রভু আমেরিকার শরণাপন্ন হয়েছিল, কিন্তু সেখান থেকেও কোনো সন্তোষজনক আশ্বাস পায়নি। অবশেষে পাকিস্তানের মিলিটারি অপারেশনের ডিজি তার ভারতীয় সমকক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তার সংকল্প, নিয়ম এবং ইচ্ছানুযায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করে। যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নেওয়ার পূর্ণ চেষ্টা আমেরিকা এবং তার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিফিং এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ আমেরিকার সমস্ত দাবির হাওয়া বের করে দিয়েছে।
একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, চোর চুরি থেকে যায়, হেরাফেরি থেকে যায় না। এবং পাকিস্তানই সেই চোর, যে হেরাফেরি থেকে বিরত থাকবে না। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরেও তার আচরণে বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি। তাই ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসের ঘটনাকে যুদ্ধ বলে গণ্য করা হবে।
পাকিস্তান তার চরিত্রের অনুরূপ আচরণ করবে, এটা শুধু আমার নয়, প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের অটল বিশ্বাস। ভারতীয় নীতি এবং ধারণা হলো, আমাদের জন্য সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়ে গেলে আমাদের সংগ্রাম এবং যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। তাকে আমরা আমাদের জয় বলে মনে করব। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য এই লড়াই কখনো শেষ হবে না কারণ তার আসল লক্ষ্য ভারতকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া। তার জন্মই ভারতের প্রতি ঘৃণার ভিত্তিতে হয়েছে। যতক্ষণ ভারত আছে, ততক্ষণ পাকিস্তানের লড়াই আছে। তো ভারতের থাকা, ভারতের উপস্থিতি, ভারতের অস্তিত্ব এটা পাকিস্তানের জন্য ঝুঁকি। সে এই ঝুঁকি শেষ করার চেষ্টা করতে থাকে।
ভারতকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য পাকিস্তান প্রথমে যুদ্ধের মাধ্যমে চেষ্টা করেছিল। যখন সে দেখল যে যুদ্ধে ক্ষতি বেশি, এবং সে তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না, তখন সে ছদ্ম যুদ্ধ শুরু করল। এই ছদ্ম যুদ্ধের অধীনে সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতে অশান্তি ছড়ানোর নীতিতে চলতে শুরু করল। এতে কোনো বড় খরচও নেই। অস্ত্র কেনার জন্য তাকে অর্থ আমেরিকা, ইউরোপ, তুরস্ক এবং চীন দিয়েই দেয়। আফগান যুদ্ধের সে খুব লাভ উঠিয়েছে। আমেরিকা থেকে সে টাকাও নিয়েছে, অস্ত্রও নিয়েছে। প্রথমে রাশিয়ার সাথে লড়াই করার জন্য,তারপর আফগানিস্তানের সাথে লড়াই করার জন্য। আমেরিকাকেও ধোঁকা দিতে থাকল। ওসামা বিন লাদেনকে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখল এবং আমেরিকাকে জানতে দিল না। অবশেষে আমেরিকা তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করল।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান যে কাউকে ধোঁকা দিতে পারে। এবং ভারতকে তো সবসময়ই ধোঁকা দেবে। পাকিস্তানের একটি কথা সবসময় বিশ্বাস করা উচিত যে তাকে কখনো বিশ্বাস করা উচিত নয়। সে সবসময় বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সবসময় ধোঁকা দেবে। তাই সে যাই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, তাকে বিশ্বাস করা উচিত নয় যে সে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদের সাথে থাকবে না। সে শুধু সুযোগের অপেক্ষা করবে। বর্তমানে সেখানে ভারতের হামলার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার কারণে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং সরকার সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের ভাবমূর্তি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য ভারতকে ক্ষতি করতে পিছপা হবে না। এই কথাটি মনে রাখবেন। এই যুদ্ধবিরতি তার জন্যই দরকার ছিল, শ্বাস নেওয়ার সুযোগ। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাকে যে ক্ষত দিয়েছে, সেগুলোর উপর মলম লাগানোর সুযোগ দরকার ছিল। তার আবার প্রস্তুতির সুযোগ দরকার ছিল। আবার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কৌশল তৈরির সময় এবং সুযোগ দরকার ছিল। তার তিনটি জিনিসের প্রয়োজন ছিল। সময়, অর্থ এবং অস্ত্র। এবং এই তিনটি জিনিসই তাকে যুদ্ধবিরতি দিতে পারত। এবং সে যুদ্ধবিরতি পেয়েছে।
বিশ্বে শুধু পাকিস্তানের নয়, আমেরিকারও ভাবমূর্তি ধোঁকাবাজ দেশের। বিশ্বজুড়ে তার ধোঁকাবাজির গল্পের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কথা বলতে গেলে। যখনই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা হবে, সংঘাত হবে, আমেরিকার ঝোঁক পাকিস্তানের দিকে থাকবে। চীনের উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য আমেরিকার ভারতের প্রয়োজন। যতক্ষণ এই প্রয়োজন ছিল না ততক্ষণ আমেরিকা ভারতের বিরোধিতা করতে থাকল। আমার মনে হয়, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ভারত তার ভদ্রতার কারণে মারা গেছে। আমেরিকা উপর অতিরিক্ত বিশ্বাসের কারণে ভারত মারা গেছে।
এটা জেনে রাখুন যে যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তানের অস্থিরতার প্রধান কারণ ছিল যে তার মনে হয়েছিল প্রথমে নিজের অস্তিত্ব বাঁচানো জরুরি। সে এই নীতিতে চলছিল যে বাঁচলে ভবিষ্যতে লড়ব। তাই সে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। এবং সে ভবিষ্যতে লড়বে এটা ধরে চলুন। অদূর ভবিষ্যতে আপনি কোনো না কোনো সন্ত্রাসী ঘটনার দুঃখজনক খবর শুনতে, দেখতে এবং পড়তে পাবেন। পাকিস্তান থামবে না। আসলে যেদিন পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করে দেবে, তার অস্তিত্বের যৌক্তিকতা শেষ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং আমাদের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের চরিত্র সম্পর্কে পরিচিত। তাই জাতির উদ্দেশ্যে তার ভাষণে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথার পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে অপারেশন সিঁদুর আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
No Comment! Be the first one.